ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য পদ্ধতি নির্ধারণের তাগিদ -ইউরোপীয় পার্লামেন্ট

eu-parliament_192665কূটনৈতিক প্রতিবেদক  :::

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এখনই গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।

 
 একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা এবং তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক কল্যাণ ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছে তারা। তিনদিনের সফর শেষে ঢাকা ত্যাগের আগে শুক্রবার স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান চার সদস্যের ইউরোপীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের প্রধান জ্যাঁ ল্যাম্ববার্ট। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন উপস্থিত ছিলেন।

জ্যাঁ ল্যাম্ববার্ট জানান, তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। এছাড়া তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করে এমন অংশীদার উন্নয়ন সংগঠনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটির প্রধান ল্যাম্ববার্ট বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপে তারা কয়েকজন ব্লগার হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এর আগে গৃহীত প্রস্তাব ও উদ্বেগের ব্যাপারে তাকে অবহিত করেন এবং ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাদের জানান, সরকার প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত করছে এবং বিচারও নিশ্চিত করবে।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কর্ম পরিবশে উন্নয়নে অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়টি নিশ্চিত করারও অনুরোধ জানান।
  এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রশংসনীয় পদক্ষেপের বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে— উল্লেখ করে  ল্যাম্ববার্ট জানান, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়।

তিনি জানান, বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তারা তৈরি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ নিয়ে তাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কারখানা পরিদর্শন, অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভবনের অবকাঠামো শক্তিশালী করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ প্রশংসনীয় বলে প্রতিনিধি দল মনে করে। তবে শ্রমিকদের কল্যাণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।
  ল্যাম্ববার্ট বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
 ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণের কিছু নেই। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইউনিয়ন সব সময়ই তৈরি পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে।’
 অপর এক প্রশ্নের জবাবে ল্যাম্ববার্ট বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপের পর তাদের মনে হয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। আইনগতভাবে শক্তিশালী হলে মানবাধিকারের পক্ষে কমিশনের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে এবং এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও কমবে।
 তিনি বলেন, সংবাদপত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের উদ্বেগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে ল্যাম্ববার্ট বলেন, ‘বিশেষ কোনও সম্পাদক বা ব্যক্তির পক্ষে নয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সার্বিকভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত দেখতে চায়। কারণ মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত না হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশও বজায় থাকে না।’
 গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এখনই পদ্ধতি নির্ধারণ করা উচিত। তবে সেই পদ্ধতি বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মনে করে, পদ্ধতির ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের বাইরে আরও কারও সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই এবং এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করাও উচিত নয়।
 ল্যাম্ববার্ট বলেন, নির্বাচন কমিশন আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার এবং নির্বাচনে যাতে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এমন পদ্ধতিই নির্ধারণ করা উচিত। বাংলাদেশের জনগণ সে ধরনের একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে পারবে বলে আশাবাদী তারা।
 এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনও আলাপ হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কোনও আলাপ হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে ল্যাম্ববার্ট বলেন, প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। সাক্ষাতে মানবাধিকার পরিস্থিতি, তৈরি পোশাক খাতসহ চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
 রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের এবং বিষয়টির প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউনিয়ন নজর রাখছে। এ সংকট নিরসনে মিয়ানমারের নতুন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পাঠকের মতামত: